“তুমি আমার বন্ধু হবে?”
এই কথাটি মনে করে অনেকেই আনমনে বা হো-হো করে হেসে উঠে হয়তো। এই লাইনটি ছোট বেলার বন্ধুত্বকে অনেকটাই প্রানবন্ত করে তোলে।
কিংবা স্কুলে প্রথমদিনে পাশাপাশি বসা দুজন সারাজীবনের বন্ধু।
রাস্তায়, বাসে হঠাৎ পরিচিত সম্পর্কও বন্ধু হয়।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে-অপরের সাথে যুক্ত থাকাটার নামও বন্ধু বলেই স্বীকৃত।
পৃথিবীর সবচেয়ে ভালোবাসার সম্পর্কই হলো বন্ধুত্ব।
বন্ধু মানে খোলা আকাশ,বন্ধু মানেই সবুজ ঘাসের বিশাল মাঠ।
কিন্তু কোথাও যেন এই বন্ধুত্ব শব্দটি আহত। মানুষের ভিন্ন যুক্তি কিংবা দেখার ভিন্ন আংগিকতা কোথাও গিয়ে যেন শব্দটির প্রতি বড্ড অবিচার করছে।
একটি সন্তান যখন জন্ম গ্রহণ করে তখন মাই তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আবার ছোট্ট শিশুটির পাশে রোজ বসা প্রজাপতিটাকেও সে বন্ধু ভাবতে শুরু করে।
বাবা-মা,ভাই-বোন,মামা-ভাগ্নে বা অন্য সকল সম্পর্কগুলো আমাদের জন্ম সূত্রে পাওয়া। আরেকটু বড় পরিসরে সহপাঠী কিংবা সহকর্মী পরিচয় গুলোও কাজের সূত্রে।
কিন্তু,এই সম্পর্কগুলো অর্থবহ তখনই হয় যখন এর মাঝে বন্ধুত্ব থাকে।
একজন শিক্ষক তখনই প্রিয় হয়ে উঠেন যখন তিনি বন্ধুসুলভ হয়ে উঠেন শিক্ষার্থিদের মাঝে। তাঁর নামের পাশে বসে প্রিয় বিশেষন।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা রোগী হয়তো ডাক্তারকে বন্ধু ভাবতে শুরু করেন। বাড়ীর সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটি বাড়ীর সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্যের প্রিয় হয়ে উঠে বন্ধুত্বের জন্যই।
কোথাও যাবার আগে কেউ-কেউ পাশের বাসায় গিয়ে বলে আসেন,”আমার গাছে একটু পানি দিবেন”। ওই গাছের সাথে তাঁর কিসের মায়া? মানুষ শখ করে পশু-পাখি পুষে, সেইখানেও কি সুন্দর ভালোবাসা। আবার হাটে কুরবানি পশু বিক্রি করে দেবার পরও যে যত্ন করে
লালন -পালন করেছে সে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে ওই পশুকে। এই ভালোবাসাগুলোর কি কোনো নাম হয়?
কেউ পাহাড় কেউ সমুদ্রের,কেউ বা প্রকৃতির প্রেমে পড়ে।
কেউ গান কেউবা কবিতার। কেউ তার পরম ভালোবাসার ডায়েরিকে সব কথা বলতে ভালোবাসে।
এই মায়াগুলোর নাম হয়তো ভালোলাগা। কিন্তু এই ভালোলাগা গুলোতেই বাস করে বন্ধুত্ব।
সম্পর্কের প্রতি যদি শ্রদ্ধা থাকে যে কোনো মানুষের সাথে যে কোনো বয়সের মানুষেরই বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।
আবার বেশীরভাগ মানুষের জীবনে একটা ছোট্ট আবার একটা বয়সে বড় বন্ধু থাকে।
যখন দুটি ছেলে-মেয়ের প্রেম কিংবা বিয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠে তখন সেই সম্পর্ক মধুর হয় যদি সম্পর্কে বন্ধুত্ব থাকে।
প্রতি বিকেলে যারা দল বেঁধে খেলতে বের হয় বা দূর-দূরান্ত ঘুরে বেড়ায় সেইখানে সবার বয়স এক নয়, কিন্তু সবার সাথে সবার এক মেইলবন্ধন, সেই সম্পর্কের নামই বন্ধুত্ব।
আট থেকে আশি সবাইকে ভালোবাসতে পারার নামই বন্ধুত্ব।
তবে সম্পর্কগুলো তখনই পরিপূর্ণতা পায় যখন পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকে, স্বচ্ছতা থাকে।
ভালোবাসার অপর নাম শ্রদ্ধাবোধ,স্নেহবোধ। আর এসবের মিশেলেই ঢাল হয়ে থাকে বন্ধুত্ব।
যার সাথে কারণে -অকারণে রাগ করা যায় সে বন্ধু, যার কাঁধে প্রবল মন খারাপে দু ফোঁটা চোখের পানি ফেলা যায় সে বন্ধু, যার সাথে কথা শেয়ার করলে সব খারাপ লাগা গুলো উধাও হয়ে যায় সে বন্ধু, পকেটে টাকা না থাকলে যে মাইলের পর মাইল একসাথে হাঁটতে পারে সেই বন্ধু।
নিদৃষ্ট কোনো সংজ্ঞায় বন্ধুত্বকে সংজ্ঞায়িত করা যায়না।
তাই হয়তো কিছুদিন আগেও একদল মানুষ যখন ব্রাজিল -আর্জেন্টিনাকে বিভক্ত করে
আনন্দ নিতে ব্যস্ত, একই সময়ে কোটি -কোটি চোখ দেখেছে মেসি-নেইমারের বন্ধুত্ব।
অসীম রঙ,রসে ভরপুর বন্ধুত্ব। যা নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য গান,কবিতা,সাহিত্য কিংবা নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র।
বন্ধুত্বের কোনো দিবস আলাদা করে হয়তো দরকার হয়না। তবুও একটি দিন যদি একটি সম্পর্ককে আলাদা করে গুরুত্বপূর্ন করতে পারে তাতে ক্ষতিও নেই।
সকল বন্ধুত্বের নাম হয়তো বন্ধু হয়না। সব বন্ধুত্বের নাম বন্ধু না হলেইবা কি! অবিশ্বাস,অপমান,অযত্নে সংকুচিত না হোক এই সম্পর্ক। একে অপরের বিশ্বাসের, ভরসার জায়গা জুড়ে থাকুক বন্ধুত্ব।
বাস করুক বন্ধুত্ব দোস্ত,হারামি,মাম্মা, ভাই,ভাইয়া,বান্ধবি বা আপুতে।
বেঁচে থাকুক বন্ধুত্ব, আপনি,তুমি কিংবা তুইতে…